আইএফএ-এর মসনদে বসার পরে বড় গলায় সচিব অনির্বাণ দত্ত বলেছিলেন বয়সভিত্তিক লিগ চালু করে, তরুণ ফুটবলারদের তুলে আনা হবে৷ কলকাতা ময়দানে ভূমিপুত্র ফুটবলারদের খরা দেখা দেওয়াতে আইএফএ-এর এই উদ্যোগ৷ খুবই ভালো প্রয়াস৷ অতীতে জেলা থেকে অনেক ফুটবলার ছুটে আসতেন কলকাতা ময়দানে৷ তাঁদের মধ্যে অনেকেই ভারতীয় দল থেকে আন্তর্জাতিক স্তরে দাপটে খেলেছেন৷ তারকা ফুটবলার হিসেবে তাঁরা বাংলার মুখ উজ্জ্বল করেছেন৷ এমনকী ভারতীয় দল গঠনে প্রথম একাদশের মধ্যে কমপক্ষে আটজন বাংলার ফুটবলার থাকতেন৷ সেই গৌরবের ইতিহাস নিয়ে আমরা আজও গর্ব অনুভব করি৷ কিন্তু সেই ভাবনা অন্ধকারে হারিয়ে গেছে৷ মুখে অনেক কথা অনর্গল বলা যায় কিন্তু আদপে তা কাজে করা হয় কিনা, তা নিয়ে সমীক্ষা হয়? কথাই সার!
কলকাতা ফুটবলে বয়সভিত্তিক লিগ শুরু হয়েছে৷ দ্বিতীয় ডিভিশন থেকে পঞ্চম ডিভিশন পর্যন্ত খেলা হচ্ছে৷ কিন্তু যে লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা সার্থক রূপ দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল, তার সাফল্য চোখে পড়েনি চলতি মরশুমে কলকাতা ময়দানে৷ একদিকে বয়সের কারচুপি, দুর্বল রেফারিং, অযোগ্য খেলার মাঠ ও ক্লাব কর্মকর্তাদের চোখরাঙানি নিয়ে বিস্তর অভিযোগ৷ আইএফএ স্পনসর পাচ্ছে কিন্তু বয়সভিত্তিক কলকাতা ফুটবল লিগের জন্যে সেইভাবে অর্থ ব্যয় করা হচ্ছে না৷ খেলার মাঠগুলোকে যদি খেলার উপযোগী করে দেওয়া হত, তাহলে তরুণ ফুটবলাররা অনেক ভালো খেলা উপহার দিতে পারতেন৷
আমরা যখন বলি, তৃণমূল স্তর থেকে ফুটবলার তুলে আনতে হবে, তখন পরিকাঠামোর দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন অনুভব করা হচ্ছে না৷ শিশু-কিশোরবেলায় পরিবারের অভিভাবকরা ঠিকমতো নজর না দিলে তাঁদের সন্তানরা যেমন জীবনে বড় জায়গা পায় না, ভবিষ্যতে তেমন প্রতিভাবান ফুটবলারদের সন্ধানে আধুনিক পরিকাঠামো তৈরি করতে না পারলে সবই বৃথা হয়ে যাবে৷ বড় বড় ক্লাবগুলোর আর্থিক স্বচ্ছলতা আছে৷ তাদের পাশে থাকতে অনেক বিনিয়োগকারী সংস্থা হাত বাড়িয়ে দেয়৷ কিন্তু ছোট ছোট ক্লাবগুলোর প্রতি তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই৷ সেই দায়বদ্ধতায় হাত প্রসারিত করে না আইএফএ নামক সংস্থা৷ শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে ফুটবলের উন্নতি করা সম্ভব নয়৷ মাঠে নামতে হবে৷ প্র্যাকটিক্যাল হতে হবে৷ ছোট ছোট ক্লাবগুলোর দৈন্যদশা শুনতে হবে৷ প্রত্যক্ষ করতে হবে৷ নিয়মিত মাঠ প্রদক্ষিণ করতে হবে৷ মাঝেমধ্যে চমক দিয়ে কোনও মাঠে গিয়ে অল্প সময় ঘুরে এসে কলকাতা ফুটবলের উন্নতি করা সম্ভব হবে না৷
অতীতের পাতায় চোখ রাখলে দেখতে পাওয়া যাবে দ্বিতীয় থেকে তার নীচের ডিভিশনের ফুটবলাররা সন্তোষ ট্রফি ফুটবলে বাংলা দলের হয়ে জার্সি গায়ে দিয়েছেন৷ কিন্তু এবারে সেই অর্থে প্রিমিয়র ডিভিশনের ফুটবলারদের নিযে বাংলা দল গঠন করা হয়েছে? দলে যাঁরা জায়গা পেযেছেন তাঁদের বয়সের গড় কত? এমনকী তিরিশ বছর বয়সী একজন গোলরক্ষককে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কি কারণ কিছু আছে? তাহলে তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে লাভ কী?
তাই জানতে ইচ্ছে করে বয়সভিত্তিক ফুটবল লিগ খেলা চলাকালীন আইএফএ মনোনীত কয়জন স্পটার ফুটবলারকে তাঁরা বাছাই করেছেন— যাঁদের মধ্যে সম্ভাবনা রয়েছে৷ আগামী দিনে যাঁরা শিরোনামে উঠে আসতে পারেন? এর উত্তরে একটা বাক্য খরচ করা যেতে পারে না৷ তাহলে সভায় বিস্তর আলোচনা ও কথার ফুলঝুরি শুনতে পাওয়া যাবে আইএফএ-র কর্মকর্তাদের৷ তবে আসল কাজে লবডঙ্কা৷
অতীতের পাতায় চোখ রাখলে দেখতে পাওয়া যাবে দ্বিতীয় থেকে তার নীচের ডিভিশনের ফুটবলাররা সন্তোষ ট্রফি ফুটবলে বাংলা দলের হয়ে জার্সি গায়ে দিয়েছেন৷ কিন্তু এবারে সেই অর্থে প্রিমিয়র ডিভিশনের ফুটবলারদের নিযে বাংলা দল গঠন করা হয়েছে? দলে যাঁরা জায়গা পেযেছেন তাঁদের বয়সের গড় কত? এমনকী তিরিশ বছর বয়সী একজন গোলরক্ষককে নিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে কি কারণ কিছু আছে? তাহলে তরুণ ফুটবলারদের নিয়ে জল্পনা-কল্পনা করে লাভ কী? এমনও হতে পারত, কয়েকজন তরুণ প্রতিভাবান ফুটবলারকে রিজার্ভে রেখে দলের সঙ্গে নিয়ে যাওয়া৷ তাঁদের অভিজ্ঞতা সঞ্চয় হত৷ বড়দের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি হত৷ তাঁরা কোচের কাছ থেকে পরামর্শ পেতে পারতেন৷ সেই ভাবনা থেকে আইএফএ-র কর্মকর্তারা দূরে থাকলেন৷ এই তো কিছুদিন আগে সন্তোষ ট্রফি ফুটবলে গ্রুপ পর্যায়ের খেলা কল্যাণীতে হল৷ প্রথম দিনে অল্প কিছু প্রাক্তন ফুটবলারদের পয়সা খরচ করে মাঠে নিয়ে যাওয়া হল৷ কিন্তু দ্বিতীয় থেকে পঞ্চম ডিভিশনের বাছাই করা ফুটবলারদের নিয়ে যাওয়া যেত৷ কিন্তু সেই ভাবনায় কেউই সবুজ সংকেত দেয়নি৷
এখন বাংলা দল গঠনে আইএফএ-এর কর্মকর্তাদের কাছের খেলোয়াড়দের কাছে নাম চাওয়া হয় ট্রায়ালে৷ তাঁদের পছন্দমতো ফুটবলাররা ঠাই পান দলে৷ অতীতে দেখা গিয়েছে মনোনীত কোচ সারা মাঠ ঘুরে ঘুরে ফুটবলারদের নজরে রাখতেন৷ তারপরে ক্লাবগুলোর কাছ থেকে সেরা পাঁচজনের নাম চাওয়া হত৷ এখন লোক দেখানো কাজটা হলেও আদপে তা হয় না৷ একটা সময় বাংলার হয়ে জাতীয় ফুটবলে খেলার অর্থ বড় প্রাপ্তি গৌরব৷ আর এখন, খেলতে হয় তাই খেলতে যাচ্ছি৷
এই জন্য বিভিন্ন ক্লাবের পক্ষ থেকে অভিযোগ আসছে৷ সেই অভিযোগের চিঠি পাহাড় হয়ে যাচ্ছে৷ তবুও আইএফএ-র কর্মকর্তাদের টনক নড়ছে না৷ কবে যে কর্মকর্তাদের ঘুম ভাঙবে কেউই হলফ করে বলতে পারবেন না! তবুও আশায় আশায় বসে আছি৷